বাস মালিকরা কোম্পানিতে আসতে চান না

Passenger Voice    |    ০১:৪৫ পিএম, ২০২১-১২-০৭


বাস মালিকরা কোম্পানিতে আসতে চান না

বাস রুট রেশনালাইজেশন তথা কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনায় আসতে চাচ্ছেন না ঢাকার গণপরিবহন মালিকরা। রেশনালাইজেশন কমিটির দাবি, পরিবহন মালিকরা সহযোগিতা করছেন না। মালিকরা বলছেন, অতীতে এমনটা চালু হলেও তা সফল হয়নি। বিষয়টি পুরো নগরীতে একসঙ্গে চালু করা না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জানা গেছে, পরিবহন মালিকরা ৪২০টি নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিটের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। পরে বিষয়টি কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করেন। সমিতি কমিটিকে জানায়, অনুমোদন পাওয়া গেলে তারা সেখান থেকে ১২০টি গাড়ি রেশনালাইজেশন কমিটিকে দিতে পারবে। এতে কমিটির প্রধান ও দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে কমিটির অন্য সদস্যদের অনুরোধে সম্মত হন।

কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও পালন করেনি পরিবহন মালিক সমিতি। কমিটি ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে নতুন গাড়িগুলো বাদ দিয়ে ১০৪টি গাড়ির তালিকা দেয়। কিন্তু বিআরটিসি পরীক্ষা করে দেখে ওগুলোর মধ্যে মাত্র ৬টি গাড়ি শর্ত পূরণ করেছে। অধিকাংশ গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই। পরে মালিক সমিতির যানবাহন ছাড়া ২৬ ডিসেম্বর বিআরটিসি’র ৩০টি বাস ও স্বতন্ত্র কোম্পানির ৭০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন মেয়র।

প্রাথমিকভাবে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রস্তাবিত এ রুটে কার্যক্রম শুরুর কথা। কিন্তু মালিকদের অসহযোগিতায় তারিখ পরিবর্তনে বাধ্য হয় রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। এর আগেও দুই দফা ঘোষণা দিয়েও চালু করা যায়নি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।

গত ২৮ নভেম্বর ডিএসসিসি নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে অনুষ্ঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৯তম সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ডিএসসিসি মেয়র তাপস বলেন, ‘নির্দিষ্ট তারিখেই পাইলটিং চালু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ১ ডিসেম্বর তারিখটা ঠিক রাখতে পারিনি। দীর্ঘদিন গণপরিবহনে যে বিশৃঙ্খলা সেটার দ্রুত অবসান ঘটানো কঠিন কাজ। তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এ কাজ হাতে নিয়েছি। ডিসেম্বরেই এটা চালু করবো।’

সভা শেষে রেশনালাইজেশন কমিটির আরেক সদস্য ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইচ্ছায় ত্রুটি ছিল না। বাস মালিকরা কথা রাখতে পারেননি। তাই বিআরটিসির বেশ কিছু বাস নিয়ে ১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৬ ডিসেম্বর এ রুট চালু করবো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকারের সঙ্গে আরও ৭০টি যুক্ত হবে। বাসের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যেসব কোম্পানি তাদের বাস রুট রেশনালাইজেশনে দেবে তাদের ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হবে। স্বতন্ত্র মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া ৭০টি বাস এতে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে ১০০টি বাস দিয়েই ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর তারিখ ধার্য রয়েছে।

ঢাকার গণপরিবহনের মালিক দুই হাজারেরও বেশি। তাদের বাসগুলো ঢাকা ও আশপাশের দুই শতাধিক রুটে চলে। যাত্রী তোলার জন্য বাসে বাসে প্রতিযোগিতা চলতে থাকে রাস্তাজুড়ে। যার করণে দুর্ঘটনা ঘটছেই। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন বাস তুলে নেওয়া এবং সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। যে বাসগুলো চলবে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীনে। মালিকরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।

এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও পরিবহন মালিক সমিতির কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাস মালিক বলেন, রেশনালাইজেশন কমিটির সিদ্ধান্তে কতটা সফলতা আসবে তা নিয়ে মালিকরা সন্দেহে আছে। তারা এখনও বিষয়টিকে আস্থায় নিতে পারেনি। তাছাড়া সহজ শর্তে ঋণসহ যেসব সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোও পাওয়া যায়নি।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলক কেন হবে? আমাদের হাতিরঝিল ও গুলশান তো মডেল আছেই। সেখানে ঢাকা চাকা চলছে। তাছাড়া ২০১০ সালে চালু হওয়া সূচনা নামে একই মডেলে একটি করিডোরে প্রায় ১০০টির মতো গাড়ি দিয়ে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা সফল হয়নি। তখন শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া এর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ইনস্টিটিউট থাকা দরকার। যেখানে অভিজ্ঞ ব্যক্তি দিয়ে একটি ব্যবস্থা চালু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ররা তো মালিকদের সঙ্গে বসেননি। যারা ইন্টারসিটিতে বাস চালান তাদের সঙ্গে বসেছেন। কিছু নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তো এটা বাস্তবায়ন করতে দেবে না। এই করিডোরে বিআরটিসির কী ভূমিকা হবে, স্টাফ বাসের ভূমিকা কী হবে? অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে। যেগুলোর কারণে আগে এটি ব্যর্থ হয়েছে।’

এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এখানে একই করিডোরে অন্য কোম্পানির বাস চলার সুযোগ রাখা হয়েছে। তখন দুই কোম্পানির বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। অন্য কোম্পানির বাসগুলো বেশি যাত্রী তুলবে। কোম্পানির বাস পথ থেকে যাত্রী নিতে পারবে না। সে যখন কম যাত্রী পাবে তখন বিশৃঙ্খলা হবে। এ কারণেই মালিকরা আসতে চাচ্ছেন না।’